"If Muslim rulers had forced religious conversion, India would not have a single Hindu remaining", says Prof. Sheldon Pollock of Columbia University
Over the last four centuries while interacting with some Indian friends, classmates or acquaintances, I have sometimes come across people who allege that Hindus were forced to convert to Islam during the Muslim-rule of India. How true are such allegations?
Professor Sheldon Pollock is a scholar of Sanskrit, American intellectual and literary history, and comparative intellectual history. He is currently the Arvind Raghunathan Professor of South Asian Studies at the Department of Middle Eastern, South Asian, and African Studies at Columbia University. He was general editor of the Clay Sanskrit Library and is founding editor of the Murty Classical Library of India. Pollock has received the Andrew W. Mellon Distinguished Achievement Award and the Government of India's Padma Sri.
Prof. Pollock was asked the same question when he was visiting India in February 2015. [You can also find the link here.] He replied, “If Muslim rulers had forced religious conversion, this country would not have a single Hindu remaining."
Here below is the full interview which got published (in Bengali language) in the Anandabazar newspaper of Kolkata, India:
নিজেকে ‘ইহুদি ব্রাহ্মণ’ বলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া চর্চার অধ্যাপক শেলডন পোলক। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মূর্তি ক্লাসিকাল লাইব্রেরি ইন্ডিয়া প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি জয়পুর লিটারারি ফেস্টিভ্যালে এসেছিলেন।
বছর পাঁচেক আগে ‘মূর্তি ক্লাসিকাল লাইব্রেরি ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে ধ্রুপদী ভারতীয় গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ শুরুর সময়ে আপনি বলেছিলেন, ভারত ঐতিহ্য ধবংসের কিনারায় দাঁড়িয়ে। আজ বইগুলি বেরোতে শুরু করেছে। বিপজ্জনক কিনারা থেকে একটু সরে আসা গেল?
একটু। কিন্তু পুরোদস্তুর আশার আলো এখনও নেই। এই যে আমরা আবুল ফজলের আকবরনামা বার করলাম, সেই অনুষ্ঠানে একটা ঘটনা ঘটল। অনেক কষ্টে দু’এক জনকে খুঁজে পাওয়া গেল, যাঁরা ফার্সি ভাষা পড়তে পারেন। ভেবে দ্যাখো, ভারত, যে দেশটা ফার্সি আধুনিকতার অন্যতম জায়গা, যেখানে ফার্সি ভাষায় প্রথম খবরের কাগজ বেরিয়েছিল, সেখানে এখন ফার্সি পড়ার লোক নেই!
এক ঘটনা সর্বত্র। তুমি হিন্দি বলয়ের হৃত্পিণ্ডে খাস দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় গিয়ে বল, আমি কেশবদাস বুঝতে চাই। লোক পাবে না। ষোড়শ শতকের অন্যতম হিন্দি কবি কেশবদাস, তাঁর কেশব গ্রন্থাবলি আজ ভারতে দুর্লভ। কর্নেল বা রাসিনের নাটক পড়তে চাই বললে কিন্তু অন্য ছবি। প্রচুর শিক্ষক, প্রচুর ছাত্র। এর পরও বলতে হবে ভারত তার ধ্রুপদী সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার কথা ভাবে?
মাস কয়েক আগে হরিয়ানার নতুন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলাম। প্রায় শ’তিনেক উজ্জ্বল, মেধাবী পড়ুয়া। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ক’জন ধ্রুপদী ভারতীয় সাহিত্য পড়েছেন? মহাভারত, কালিদাস, বাণভট্ট বা কুমারিল ভট্টের শ্লোকবর্তিকা? এক জনও নয়! ধ্রুপদী সাহিত্যকে বাদ দিয়েই ভাবী মেধাজীবীরা তৈরি হবেন?
এই ফাঁকটা ভরাট করার জন্যই মূর্তি লাইব্রেরি সিরিজ। খ্রিস্টের জন্মের তিন হাজার বছর আগে প্লাস্টিক সার্জারি ছিল কি না, ইন্টারঅ্যাক্টিভ বিমান ছিল কি না সে সব অবান্তর। এ দেশের ভাবী প্রজন্মকে ধ্রুপদী সংস্কৃতিতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। নইলে ঐতিহ্য নির্বিচারে ধ্বংস হতে থাকবে।
প্রশ্ন: আপনার কী মনে হয় প্রাচীন ইন্টারঅ্যাক্টিভ বিমান নিয়ে?
আমার কিছু মনে হয় না। আমি একটাই কথা বলব, মূর্তি ক্লাসিকাল লাইব্রেরি প্রকৃত প্রমাণসহ ভারতীয় ক্লাসিককে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চায়। রূপকথার গল্প বা ফ্যান্টাসির সেখানে স্থান নেই।
আবুল ফজলের আকবরনামা আপনারা বের করেছেন। কেন? ‘আইন-ই-আকবরি’র মতো বইকে বাদ দিয়ে কেন ‘আকবরনামা’?
এক মার্কিন সেনাপতি একটা কথা বলেছিলেন। মনের মতো সেনাবাহিনীর কথা না ভেবে বরং হাতের কাছে যে বাহিনী পেয়েছ, তা নিয়েই যুদ্ধে যাও। আমরা একটা ছাপাখানা, হাতের কাছে আকবরনামা পেয়েছি, ফলে তাই নিয়েই রণক্ষেত্রে এসেছি। পালি ভাষা থেকে থেরীগাথা, ফার্সি থেকে আকবরনামা, গুরমুখী থেকে বুলে শাহ, হিন্দি থেকে সুরদাস আর তেলুগুভাষা থেকে মনুকাহিনী, এই নিয়ে আমাদের প্রথম পাঁচটি প্রকাশনা। উপরন্তু তেলুগু ভাষা থেকে কম্বন রামায়ণ, প্রাচীন কন্নড় ভাষা থেকে হরিশচন্দ্র কাব্য, ফার্সি ভাষা থেকে আমির খসরু অনুবাদের কাজও চলছে। আপাতত, ১২ টা ভাষা থেকে অনুবাদ। ইচ্ছা আছে, আগামী ২১১৫ সালের মধ্যে অন্তত ৫০০টা টাইট্ল লোকের কাছে পৌঁছে দেব।
একদা আপনি ক্লে স্যাংস্ক্রিট লাইব্রেরি সিরিজেও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সে সব বইয়ের দাম ছিল আমাদের মতো পাঠকের নাগালের বাইরে। তার সঙ্গে এই সিরিজটার তফাত কোথায়?
দামের গল্পটা জানি। আমি জন ক্লে-কে বলেছিলাম, ভারতীয় সংস্করণ বের করতে। কিন্তু তখন ফান্ড শেষ হয়ে আসছে, তার পর উনি হঠাত্ মারাও গেলেন। বাণভট্টের ‘কাদম্বরী’ বা মহাভারতের পুরো অনুবাদ বের হল না। তার ওপর ক্লে মুখ্যত সংস্কৃত সাহিত্যে গুরুত্ব দিত। এখানে অন্য ভারতীয় ভাষাগুলিকেও আমরা নিয়ে এসেছি। ক্লে সিরিজে মুখবন্ধগুলি ছিল সংক্ষিপ্ত, এখানে আরও ডিটেলে।
আপনার ‘দ্য ল্যাঙ্গোয়েজ অব দ্য গডস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড অব মেন’ বইতে লিখেছিলেন, সংস্কৃতকে সব ভারতীয় ভাষার মা ভাবতে হলে আর একটি জাতীয়তাবাদের খপ্পরে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তা হলে আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলির সঙ্গে সংস্কৃতের সম্পর্কটা ঠিক কী?
উত্তরটা জটিল। এক এক প্রান্তে এক এক রকম সম্পর্ক। কিন্তু ভাষার ব্যাপারে মা-মেয়ের বায়োলজিক্যাল উপমাটা আমার পছন্দ নয়। দক্ষিণ ভারতের কথা ধরো। মালয়ালমে প্রায় ৯০ শতাংশ সংস্কৃত শব্দ, তেলুগুতে প্রায় ৭০ শতাংশ, কন্নড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। তামিলে সংস্কৃত শব্দ সবচেয়ে কম। কিন্তু শব্দ বা ভোকাবুলারি বাদ দিয়ে ভাষার টেকনিক্যাল দিকগুলি ভাব। ক্রিয়াপদের ব্যবহার, অন্বয়, বাক্যগঠন। প্রত্যেকটা সংস্কৃতের চেয়ে আলাদা।
উত্তর ভারতেও এক ঘটনা। হিন্দি ভাষার গড়নে অপভ্রংশ, ফার্সি, উর্দু ইত্যাদির প্রভাব বেশি। বাংলায় আবার সংস্কৃতের প্রবল প্রতাপ, সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা। ফলে মা-মেয়ের বদলে বন্ধুত্বের উপমাই আমার বেশি পছন্দের। বাংলা, মালয়ালমে সংস্কৃতের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রবল, তামিলে আবার আলগা বন্ধুত্ব।
আপনার বইতে বারংবার একটা শব্দবন্ধ উল্লেখ করেছিলেন: স্যান্স্ক্রিট কসমোপলিটানিজ্ম। এর অর্থ?
খুব সহজ। সংস্কৃত নিছক পুজোআচ্চার ভাষা নয়। কাবুল, কান্দাহার, পেশোয়ার থেকে জাভা, সুমাত্রা এলাকায় ভাষাটা চলছে। কাম্বোডিয়ার খ্মের রাজারা তাঁদের প্রশস্তি উত্কীর্ণ করছেন সংস্কৃতে। ব্যাকরণ, অভিধান, ছন্দে গুরুত্ব দিচ্ছে সব রাজশক্তিই। হিউয়েন সাং লিখেছেন, পাণিনি তাঁর ব্যাকরণ শেষ করে রাজাকে পড়তে দিয়েছেন। রাজা বললেন, সবাইকে শিখতে হবে ভাষার এই সূত্র। ঠিকঠাক বললে হাজার স্বর্ণমুদ্রা পুরস্কার। রাজশক্তির নীতির সঙ্গে ভাষা, সংস্কৃতি, সব এক সুতোয় গাঁথা।
এই জন্য এখানে রাজনীতিকরা কথায় কথায় সংস্কৃতির ধুয়ো তোলেন?
সংস্কৃতি শব্দটা সংস্কৃত ভাষায় এসেছে অনেক পরে। বিশ্বায়নের যুগে ইংরেজি আজ প্রধান ভাষা। তার সঙ্গে প্রাক্-আধুনিক কালের কসমোপলিটান সংস্কৃতের একটা তফাত আছে। পেশোয়ার থেকে সুমাত্রা অবধি সবাই সেই ভাষায় কাব্য লেখে, প্রশস্তি রচনা করে। ভাষাটা নির্দিষ্ট কোনও এথনিসিটির বাহক নয়। ‘দেশি’ শব্দটাই ধরো। তুমি ভারতবাসী, আমি ভিনদেশি, এই অর্থে শব্দটা সংস্কৃতে ব্যবহৃত হয়নি। সংস্কৃতে দেশি মানে নির্দিষ্ট কিছু কালচারাল প্র্যাকটিস। সম্প্রদায়গত অনুভূতি নয়। ইংরেজি যতই ভারতীয় ভাষা হোক, এখানকার পরিবেশে ড্যাফোডিল বা টেম্স পাবে না। কিন্তু ভারত থেকে জাভা, কম্বোডিয়া, সর্বত্র সংস্কৃত সাহিত্যে মেরুপর্বত, গঙ্গার উদাহরণ পাবে। ভাষাটার কোনও নির্দিষ্ট কেন্দ্র নেই, সর্বত্র সে অ্যাট হোম।
কিন্তু ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র? কাস্ট সিস্টেম? মেয়েদের সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণের অধিকার না দেওয়া?
আমি কলাম্বিয়ায় অম্বেডকর সংস্কৃত ফেলোশিপ চালাতাম। পিছিয়ে পড়া জনজাতির মেধাবী ছেলেমেয়েদের সংস্কৃত শেখানোর প্রোগ্রাম। সংস্কৃতের সঙ্গে অম্বেডকরের চমত্কার সম্পর্ক ছিল। ‘হু ইজ আ শূদ্র’ নিবন্ধটা শুরুই করেছিলেন ভবভূতির কোটেশন দিয়ে। প্রথম থেকে সংস্কৃত পড়ার ভাল সুযোগ পেলে অম্বেডকর আরও বড় স্কলার হতেন।
কসমোপলিটন সংস্কৃতিতে এ ভাবেই বহু স্বর থাকে। সংস্কৃতেও ছিল। জাতিভেদের বিরুদ্ধেই ছিল। মধ্যযুগের একটা সংস্কৃত শ্লোক ধরো। কবি ঠিক দলিত নন, তবে উচ্চবর্ণও নন। লিখছেন, অয়ং নিজঃ পরো বেতি গণনা লঘুচেতসাম্/উদারচরিতানাং তু বসুধৈব কুটুম্বকম্। মানে, ক্ষুদ্রচেতা লোকেই আপন-পর ভাগ করে থাকে। উদারহৃদয়ের কাছে তামাম দুনিয়াই আত্মীয়। ঘোরনা বলে এক কুম্ভকারের শ্লোকের প্রশংসায় বলা হচ্ছে, যাঁরা বাগ্দেবীর আশীর্বাদ পান, জাতি তাঁদের অন্তরায় হয় না। আমি এই ঘটনাগুলিই মনে করতে বলছি। ব্রাহ্মণ কে? যিনি জ্ঞানের চর্চা করেন। আমি তো নিজেকে ইহুদি ব্রাহ্মণ বলি!
অনেকে বলেন, ইসলামি আক্রমণের পর সংস্কৃতের পতন হল, শাসকের দাপটে সবাই উর্দু, ফার্সি শিখতে ছুটল।
বাজে কথা। তোমাদের বাংলার নবদ্বীপ বা মিথিলা সংস্কৃত ন্যায়চর্চার কেন্দ্র হয়েছিল সুলতানি আমলে। দারাশিকো বেদান্ত পড়ছেন বারাণসীর পণ্ডিতদের কাছে। মুসলমান শাসকরা এ দেশে প্রায় বারোশো বছর রাজত্ব করেছিলেন। ওঁরা জোর করে ধর্মান্তর করালে এ দেশে এক জনও হিন্দু থাকত না। ওঁদের উত্সাহ না থাকলে সংস্কৃতও টিকে থাকত না। ধর্মের সঙ্গে ভাষার উত্থানপতন গুলিয়ে তাই লাভ নেই।
সংস্কৃত এবং ধ্রুপদী সাহিত্য চর্চায় আজকের ভারত কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে?
চাই মুক্ত, বহু স্বরকে সম্মান করার মতো পরিবেশ। সংস্কৃতকে কোনও নির্দিষ্ট বর্ণের মানুষ সংরক্ষণ করেনি, সমাজের সব অংশের সেখানে ভূমিকা রয়েছে। কোনও ডিভাইসিভ, এক্সক্লুশনারি, মেজরিটারিয়ান রাজনীতি তাই সংস্কৃতের অন্তরায়। দরকার সকলকে নিয়ে মুক্ত আনন্দের সৃষ্টিশীল পরিবেশ। পরাজিতের বিষণ্ণতাবোধ থেকে সংস্কৃত পড়া যায় না, দরকার বহু স্বরের বহু স্তরের আনন্দের উপলব্ধি। আনন্দবাজার পত্রিকার পাঠকরা হয়তো ভাববেন, আমেরিকা থেকে এসে ওপর-পড়া হয়ে জ্ঞান বিতরণ করছি। আমি কিন্তু বিভীষণের মতো কথাগুলি বলতে চাই। রামের শিবিরে গিয়ে বিভীষণ বলেছিলেন, আমি যাতে তোমার ভাল হয়, বন্ধুর মতো সেই সত্য শোনাতে এসেছি।
প্রথমেই রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থান নামে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানটির খোলনলচে বদলাতে হবে। ব্রাহ্মণ, অব্রাহ্মণ, মুসলিম, দলিত সব মিলিয়ে ভারতে কত জন সংস্কৃত পড়ে? কোনও পরিসংখ্যান নেই। তবু আমার ধারণা, সাড়ে সাত কোটি। সংখ্যাটা তিন কোটি হতে পারে, দশ কোটিও! এই সাড়ে সাত কোটি ছাত্র কী শেখে, কতটুকুই বা শেখে? কিচ্ছু না। তাদের দোষ নেই, শেখানোর লোক কোথায়? ফলে প্রথমেই দরকার আন্তর্জাতিক মানের একটি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ক্লাসিকাল স্টাডিজ। এ দেশে এত আইআইটি, আইআইএম! সবাই ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং আর ম্যানেজমেন্ট পড়তে ছুটছে। কিন্তু ধ্রুপদী সাহিত্যচর্চার একটা কেন্দ্র নেই? সেখানে মেধার চর্চা হবে, সেরা লোকেরা পড়াবেন ও গবেষণা করবেন। তখনই দ্বিতীয় প্রজন্মের স্কলারেরা তৈরি হবেন। এটাই সবচেয়ে জরুরি।
Professor Sheldon Pollock is a scholar of Sanskrit, American intellectual and literary history, and comparative intellectual history. He is currently the Arvind Raghunathan Professor of South Asian Studies at the Department of Middle Eastern, South Asian, and African Studies at Columbia University. He was general editor of the Clay Sanskrit Library and is founding editor of the Murty Classical Library of India. Pollock has received the Andrew W. Mellon Distinguished Achievement Award and the Government of India's Padma Sri.
Prof. Pollock was asked the same question when he was visiting India in February 2015. [You can also find the link here.] He replied, “If Muslim rulers had forced religious conversion, this country would not have a single Hindu remaining."
Here below is the full interview which got published (in Bengali language) in the Anandabazar newspaper of Kolkata, India:
নিজেকে ‘ইহুদি ব্রাহ্মণ’ বলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া চর্চার অধ্যাপক শেলডন পোলক। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মূর্তি ক্লাসিকাল লাইব্রেরি ইন্ডিয়া প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি জয়পুর লিটারারি ফেস্টিভ্যালে এসেছিলেন।
বছর পাঁচেক আগে ‘মূর্তি ক্লাসিকাল লাইব্রেরি ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে ধ্রুপদী ভারতীয় গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ শুরুর সময়ে আপনি বলেছিলেন, ভারত ঐতিহ্য ধবংসের কিনারায় দাঁড়িয়ে। আজ বইগুলি বেরোতে শুরু করেছে। বিপজ্জনক কিনারা থেকে একটু সরে আসা গেল?
একটু। কিন্তু পুরোদস্তুর আশার আলো এখনও নেই। এই যে আমরা আবুল ফজলের আকবরনামা বার করলাম, সেই অনুষ্ঠানে একটা ঘটনা ঘটল। অনেক কষ্টে দু’এক জনকে খুঁজে পাওয়া গেল, যাঁরা ফার্সি ভাষা পড়তে পারেন। ভেবে দ্যাখো, ভারত, যে দেশটা ফার্সি আধুনিকতার অন্যতম জায়গা, যেখানে ফার্সি ভাষায় প্রথম খবরের কাগজ বেরিয়েছিল, সেখানে এখন ফার্সি পড়ার লোক নেই!
মাস কয়েক আগে হরিয়ানার নতুন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলাম। প্রায় শ’তিনেক উজ্জ্বল, মেধাবী পড়ুয়া। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ক’জন ধ্রুপদী ভারতীয় সাহিত্য পড়েছেন? মহাভারত, কালিদাস, বাণভট্ট বা কুমারিল ভট্টের শ্লোকবর্তিকা? এক জনও নয়! ধ্রুপদী সাহিত্যকে বাদ দিয়েই ভাবী মেধাজীবীরা তৈরি হবেন?
এই ফাঁকটা ভরাট করার জন্যই মূর্তি লাইব্রেরি সিরিজ। খ্রিস্টের জন্মের তিন হাজার বছর আগে প্লাস্টিক সার্জারি ছিল কি না, ইন্টারঅ্যাক্টিভ বিমান ছিল কি না সে সব অবান্তর। এ দেশের ভাবী প্রজন্মকে ধ্রুপদী সংস্কৃতিতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। নইলে ঐতিহ্য নির্বিচারে ধ্বংস হতে থাকবে।
প্রশ্ন: আপনার কী মনে হয় প্রাচীন ইন্টারঅ্যাক্টিভ বিমান নিয়ে?
আমার কিছু মনে হয় না। আমি একটাই কথা বলব, মূর্তি ক্লাসিকাল লাইব্রেরি প্রকৃত প্রমাণসহ ভারতীয় ক্লাসিককে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চায়। রূপকথার গল্প বা ফ্যান্টাসির সেখানে স্থান নেই।
আবুল ফজলের আকবরনামা আপনারা বের করেছেন। কেন? ‘আইন-ই-আকবরি’র মতো বইকে বাদ দিয়ে কেন ‘আকবরনামা’?
এক মার্কিন সেনাপতি একটা কথা বলেছিলেন। মনের মতো সেনাবাহিনীর কথা না ভেবে বরং হাতের কাছে যে বাহিনী পেয়েছ, তা নিয়েই যুদ্ধে যাও। আমরা একটা ছাপাখানা, হাতের কাছে আকবরনামা পেয়েছি, ফলে তাই নিয়েই রণক্ষেত্রে এসেছি। পালি ভাষা থেকে থেরীগাথা, ফার্সি থেকে আকবরনামা, গুরমুখী থেকে বুলে শাহ, হিন্দি থেকে সুরদাস আর তেলুগুভাষা থেকে মনুকাহিনী, এই নিয়ে আমাদের প্রথম পাঁচটি প্রকাশনা। উপরন্তু তেলুগু ভাষা থেকে কম্বন রামায়ণ, প্রাচীন কন্নড় ভাষা থেকে হরিশচন্দ্র কাব্য, ফার্সি ভাষা থেকে আমির খসরু অনুবাদের কাজও চলছে। আপাতত, ১২ টা ভাষা থেকে অনুবাদ। ইচ্ছা আছে, আগামী ২১১৫ সালের মধ্যে অন্তত ৫০০টা টাইট্ল লোকের কাছে পৌঁছে দেব।
একদা আপনি ক্লে স্যাংস্ক্রিট লাইব্রেরি সিরিজেও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সে সব বইয়ের দাম ছিল আমাদের মতো পাঠকের নাগালের বাইরে। তার সঙ্গে এই সিরিজটার তফাত কোথায়?
দামের গল্পটা জানি। আমি জন ক্লে-কে বলেছিলাম, ভারতীয় সংস্করণ বের করতে। কিন্তু তখন ফান্ড শেষ হয়ে আসছে, তার পর উনি হঠাত্ মারাও গেলেন। বাণভট্টের ‘কাদম্বরী’ বা মহাভারতের পুরো অনুবাদ বের হল না। তার ওপর ক্লে মুখ্যত সংস্কৃত সাহিত্যে গুরুত্ব দিত। এখানে অন্য ভারতীয় ভাষাগুলিকেও আমরা নিয়ে এসেছি। ক্লে সিরিজে মুখবন্ধগুলি ছিল সংক্ষিপ্ত, এখানে আরও ডিটেলে।
আপনার ‘দ্য ল্যাঙ্গোয়েজ অব দ্য গডস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড অব মেন’ বইতে লিখেছিলেন, সংস্কৃতকে সব ভারতীয় ভাষার মা ভাবতে হলে আর একটি জাতীয়তাবাদের খপ্পরে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তা হলে আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলির সঙ্গে সংস্কৃতের সম্পর্কটা ঠিক কী?
উত্তরটা জটিল। এক এক প্রান্তে এক এক রকম সম্পর্ক। কিন্তু ভাষার ব্যাপারে মা-মেয়ের বায়োলজিক্যাল উপমাটা আমার পছন্দ নয়। দক্ষিণ ভারতের কথা ধরো। মালয়ালমে প্রায় ৯০ শতাংশ সংস্কৃত শব্দ, তেলুগুতে প্রায় ৭০ শতাংশ, কন্নড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। তামিলে সংস্কৃত শব্দ সবচেয়ে কম। কিন্তু শব্দ বা ভোকাবুলারি বাদ দিয়ে ভাষার টেকনিক্যাল দিকগুলি ভাব। ক্রিয়াপদের ব্যবহার, অন্বয়, বাক্যগঠন। প্রত্যেকটা সংস্কৃতের চেয়ে আলাদা।
উত্তর ভারতেও এক ঘটনা। হিন্দি ভাষার গড়নে অপভ্রংশ, ফার্সি, উর্দু ইত্যাদির প্রভাব বেশি। বাংলায় আবার সংস্কৃতের প্রবল প্রতাপ, সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা। ফলে মা-মেয়ের বদলে বন্ধুত্বের উপমাই আমার বেশি পছন্দের। বাংলা, মালয়ালমে সংস্কৃতের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রবল, তামিলে আবার আলগা বন্ধুত্ব।
আপনার বইতে বারংবার একটা শব্দবন্ধ উল্লেখ করেছিলেন: স্যান্স্ক্রিট কসমোপলিটানিজ্ম। এর অর্থ?
খুব সহজ। সংস্কৃত নিছক পুজোআচ্চার ভাষা নয়। কাবুল, কান্দাহার, পেশোয়ার থেকে জাভা, সুমাত্রা এলাকায় ভাষাটা চলছে। কাম্বোডিয়ার খ্মের রাজারা তাঁদের প্রশস্তি উত্কীর্ণ করছেন সংস্কৃতে। ব্যাকরণ, অভিধান, ছন্দে গুরুত্ব দিচ্ছে সব রাজশক্তিই। হিউয়েন সাং লিখেছেন, পাণিনি তাঁর ব্যাকরণ শেষ করে রাজাকে পড়তে দিয়েছেন। রাজা বললেন, সবাইকে শিখতে হবে ভাষার এই সূত্র। ঠিকঠাক বললে হাজার স্বর্ণমুদ্রা পুরস্কার। রাজশক্তির নীতির সঙ্গে ভাষা, সংস্কৃতি, সব এক সুতোয় গাঁথা।
এই জন্য এখানে রাজনীতিকরা কথায় কথায় সংস্কৃতির ধুয়ো তোলেন?
সংস্কৃতি শব্দটা সংস্কৃত ভাষায় এসেছে অনেক পরে। বিশ্বায়নের যুগে ইংরেজি আজ প্রধান ভাষা। তার সঙ্গে প্রাক্-আধুনিক কালের কসমোপলিটান সংস্কৃতের একটা তফাত আছে। পেশোয়ার থেকে সুমাত্রা অবধি সবাই সেই ভাষায় কাব্য লেখে, প্রশস্তি রচনা করে। ভাষাটা নির্দিষ্ট কোনও এথনিসিটির বাহক নয়। ‘দেশি’ শব্দটাই ধরো। তুমি ভারতবাসী, আমি ভিনদেশি, এই অর্থে শব্দটা সংস্কৃতে ব্যবহৃত হয়নি। সংস্কৃতে দেশি মানে নির্দিষ্ট কিছু কালচারাল প্র্যাকটিস। সম্প্রদায়গত অনুভূতি নয়। ইংরেজি যতই ভারতীয় ভাষা হোক, এখানকার পরিবেশে ড্যাফোডিল বা টেম্স পাবে না। কিন্তু ভারত থেকে জাভা, কম্বোডিয়া, সর্বত্র সংস্কৃত সাহিত্যে মেরুপর্বত, গঙ্গার উদাহরণ পাবে। ভাষাটার কোনও নির্দিষ্ট কেন্দ্র নেই, সর্বত্র সে অ্যাট হোম।
কিন্তু ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র? কাস্ট সিস্টেম? মেয়েদের সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণের অধিকার না দেওয়া?
আমি কলাম্বিয়ায় অম্বেডকর সংস্কৃত ফেলোশিপ চালাতাম। পিছিয়ে পড়া জনজাতির মেধাবী ছেলেমেয়েদের সংস্কৃত শেখানোর প্রোগ্রাম। সংস্কৃতের সঙ্গে অম্বেডকরের চমত্কার সম্পর্ক ছিল। ‘হু ইজ আ শূদ্র’ নিবন্ধটা শুরুই করেছিলেন ভবভূতির কোটেশন দিয়ে। প্রথম থেকে সংস্কৃত পড়ার ভাল সুযোগ পেলে অম্বেডকর আরও বড় স্কলার হতেন।
কসমোপলিটন সংস্কৃতিতে এ ভাবেই বহু স্বর থাকে। সংস্কৃতেও ছিল। জাতিভেদের বিরুদ্ধেই ছিল। মধ্যযুগের একটা সংস্কৃত শ্লোক ধরো। কবি ঠিক দলিত নন, তবে উচ্চবর্ণও নন। লিখছেন, অয়ং নিজঃ পরো বেতি গণনা লঘুচেতসাম্/উদারচরিতানাং তু বসুধৈব কুটুম্বকম্। মানে, ক্ষুদ্রচেতা লোকেই আপন-পর ভাগ করে থাকে। উদারহৃদয়ের কাছে তামাম দুনিয়াই আত্মীয়। ঘোরনা বলে এক কুম্ভকারের শ্লোকের প্রশংসায় বলা হচ্ছে, যাঁরা বাগ্দেবীর আশীর্বাদ পান, জাতি তাঁদের অন্তরায় হয় না। আমি এই ঘটনাগুলিই মনে করতে বলছি। ব্রাহ্মণ কে? যিনি জ্ঞানের চর্চা করেন। আমি তো নিজেকে ইহুদি ব্রাহ্মণ বলি!
অনেকে বলেন, ইসলামি আক্রমণের পর সংস্কৃতের পতন হল, শাসকের দাপটে সবাই উর্দু, ফার্সি শিখতে ছুটল।
বাজে কথা। তোমাদের বাংলার নবদ্বীপ বা মিথিলা সংস্কৃত ন্যায়চর্চার কেন্দ্র হয়েছিল সুলতানি আমলে। দারাশিকো বেদান্ত পড়ছেন বারাণসীর পণ্ডিতদের কাছে। মুসলমান শাসকরা এ দেশে প্রায় বারোশো বছর রাজত্ব করেছিলেন। ওঁরা জোর করে ধর্মান্তর করালে এ দেশে এক জনও হিন্দু থাকত না। ওঁদের উত্সাহ না থাকলে সংস্কৃতও টিকে থাকত না। ধর্মের সঙ্গে ভাষার উত্থানপতন গুলিয়ে তাই লাভ নেই।
সংস্কৃত এবং ধ্রুপদী সাহিত্য চর্চায় আজকের ভারত কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে?
চাই মুক্ত, বহু স্বরকে সম্মান করার মতো পরিবেশ। সংস্কৃতকে কোনও নির্দিষ্ট বর্ণের মানুষ সংরক্ষণ করেনি, সমাজের সব অংশের সেখানে ভূমিকা রয়েছে। কোনও ডিভাইসিভ, এক্সক্লুশনারি, মেজরিটারিয়ান রাজনীতি তাই সংস্কৃতের অন্তরায়। দরকার সকলকে নিয়ে মুক্ত আনন্দের সৃষ্টিশীল পরিবেশ। পরাজিতের বিষণ্ণতাবোধ থেকে সংস্কৃত পড়া যায় না, দরকার বহু স্বরের বহু স্তরের আনন্দের উপলব্ধি। আনন্দবাজার পত্রিকার পাঠকরা হয়তো ভাববেন, আমেরিকা থেকে এসে ওপর-পড়া হয়ে জ্ঞান বিতরণ করছি। আমি কিন্তু বিভীষণের মতো কথাগুলি বলতে চাই। রামের শিবিরে গিয়ে বিভীষণ বলেছিলেন, আমি যাতে তোমার ভাল হয়, বন্ধুর মতো সেই সত্য শোনাতে এসেছি।
প্রথমেই রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থান নামে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানটির খোলনলচে বদলাতে হবে। ব্রাহ্মণ, অব্রাহ্মণ, মুসলিম, দলিত সব মিলিয়ে ভারতে কত জন সংস্কৃত পড়ে? কোনও পরিসংখ্যান নেই। তবু আমার ধারণা, সাড়ে সাত কোটি। সংখ্যাটা তিন কোটি হতে পারে, দশ কোটিও! এই সাড়ে সাত কোটি ছাত্র কী শেখে, কতটুকুই বা শেখে? কিচ্ছু না। তাদের দোষ নেই, শেখানোর লোক কোথায়? ফলে প্রথমেই দরকার আন্তর্জাতিক মানের একটি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ক্লাসিকাল স্টাডিজ। এ দেশে এত আইআইটি, আইআইএম! সবাই ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং আর ম্যানেজমেন্ট পড়তে ছুটছে। কিন্তু ধ্রুপদী সাহিত্যচর্চার একটা কেন্দ্র নেই? সেখানে মেধার চর্চা হবে, সেরা লোকেরা পড়াবেন ও গবেষণা করবেন। তখনই দ্বিতীয় প্রজন্মের স্কলারেরা তৈরি হবেন। এটাই সবচেয়ে জরুরি।
Comments
Post a Comment